Wednesday, August 17, 2016

Farrukh Ahmad

কবি  ফররুখ আহমদ

ফররুখ আহমদ (জন্ম: জুন ১০, ১৯১৮ - মৃত্যু: অক্টোবর ১৯, ১৯৭৪) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী কবি। এই বাঙালি কবি 'মুসলিম রেনেসাঁর কবি' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তাঁর কবিতায় বাংলার অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। বিংশ শতাব্দীর এই কবি ইসলামী ভাবধারার বাহক হলেও তাঁর কবিতা প্রকরণকৌশল, শব্দচয়ন এবং বাক্‌প্রতিমার অনন্য বৈশিষ্টে সমুজ্জ্বল। আধুনিকতার সকল লক্ষণ তাঁর কবিতায় পরিব্যাপ্ত। তাঁর কবিতায় রোমান্টিকতা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের ধারাবাহিকতা পরিস্ফুট।

শিক্ষাজীবন
ফররুখ আহমদ খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯৩৯ সালে আই.এ. পাস করেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বামপন্থী রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন। তবে চল্লিশ-এর দশকে তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসে পরিবর্তন আসে। তিনি ভারত বিভাগ তথা পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেন।
জন্ম ও পরিবার
ফররুখ আহমদের জন্ম ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে। তার বাবা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। ফররুখ আহমদের মায়ের নাম রওশন আখতার।
১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি)-এর সঙ্গে ফররুখ আহমদের বিয়ে হয়।[৩] তাঁর নিজের বিয়ে উপলক্ষে ফররুখ 'উপহার' নামে একটি কবিতা লেখেন যা 'সওগাত' পত্রিকায় অগ্রহায়ণ ১৩৪৯ সংখ্যায় ছাপা হয়।
ফররুখ আহমদের ছেলে-মেয়ে ১১ জন। তাঁরা হলেন- সৈয়দা শামারুখ বানু, সৈয়দা লালারুখ বানু, সৈয়দ আবদুল্লাহল মাহমুদ, সৈয়দ আবদুল্লাহেল মাসুদ, সৈয়দ মনজুরে এলাহি, সৈয়দা ইয়াসমিন বানু, সৈয়দ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান [আহমদ আখতার], সৈয়দ মুহম্মদ ওয়হিদুজ্জামান, সৈয়দ মুখলিসুর রহমান, সৈয়দ খলিলুর রহমান ও সৈয়দ মুহম্মদ আবদুহু।
কর্মজীবন
ফররুখ আহমদের কর্মজীবন শুরু হয় কোলকাতায়। ১৯৪৩ সালে আই.জি.প্রিজন অফিসে, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইতে এবং ১৯৪৬ সালে জলপাইগুড়িতে একটি ফার্মে চাকরি করেন তিনি। ১৯৪৫ সালে তিনি মাসিক 'মোহাম্মদী'-র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।[  তবে শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে চাকরি করেন ঢাকা বেতারে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ফররুখ আহমদ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে এসে ঢাকা বেতারে যোগ দেন। এখানেই প্রথমে অনিয়মিত হিসেবে এবং পরে নিয়মিত স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ফররুখ আহমদ মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর, সন্ধেবেলা ঢাকায়।



সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তাঁর প্রধান পরিচয় 'কবি'। ফররুখ আহমদ সনেট রচনারও করেছেন।[৫] তাঁর রচনায় ধর্মীয় ভাবধারার প্রভাব দেখা যায়। এছাড়া আরবি ও ফার্সি শব্দের প্রাচুর্য তাঁর লেখার অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য। ইসলামী ডানপন্থার প্রতি সমর্থন থাকায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিলেন না। তবে তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার সমর্থন করতেন। [৬] পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই কবি ফররুখ আহমদ আশ্বিন ১৩৫৪ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৪৭) সংখ্যা মাসিক সওগাত-এ পাকিস্তান : রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য নিবন্ধে লেখেন : "গণতান্ত্রিক বিচারে যেখানে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া উচিত সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষাকে পর্যন্ত যাঁরা অন্য একটি প্রাদেশিক ভাষায় রূপান্তরিত করতে চান তাঁদের উদ্দেশ্য অসৎ। পূর্ব পাকিস্তানের সকল অধিবাসীর সাথে আমিও এই প্রকার অসাধু প্রতারকদের বিরুদ্ধে আমার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি

No comments:

Post a Comment